****" নয়নতারা "****

কাজ না থাকলে যা হয় ......
নিজের ভালোলাগার জায়গাটা নিয়ে ...                  লেখালেখি নিজের মাতৃভাষায়......
    ****" নয়নতারা "****
 ॰ এই গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম  (Catharanthus roseus)
 ॰ এটি Apocynaceae পরিবারের উদ্ভিদ।
 ॰ উচ্চতায় ৬০-৮০ সেন্টিমিটার (২ ফুট) পর্যন্ত হয়। সুন্দর সবুজ চকচকে পাতাযুক্ত গুল্ম ধরনের গাছ। ফুল ফোটে সারা বছর। গাছও লাগানো যায় সব ঋতুতে। ফুল বিভিন্ন রঙের হতে পারে যেমন, সাদা, বেগুনি, ও গোলাপী বর্ণের হয়। অসাধারণ ছোট একটি ফুল। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়।

*** এই ফুলটি দেশি না বিদেশি? 
॰ ইতিহাস বলছে, এই ফুলটির জন্ম ফ্রান্সে। ১৮ শতকে প্রথম ফুলটির দেখা মেলে। নানা ওষুধ তৈরির কারণেই সে সময় ফরাসিরা এর চাষ শুরু করেছিল। পরবর্তী সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং দক্ষিণ আমেরিকার নানা দেশে এই ফুলটির দেখা মিলতে শুরু করে। সেখানেও মূলত চিকিৎসার কাজেই লাগানো হত নয়নতারা ফুল কে।
 ॰ এভাবে নানা দেশ ঘুরতে-ঘুরতে ফুলটি  একদিন এদেশে এসে পৌঁছয়। আসামাত্রই এর গুণ সম্পর্কে জানতে পারি আমরা। সেই থেকেই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আধুনিক চিকিৎসার রমরমা বাড়ার পর থেকে নয়নতারা ফুলের কথা আর কেউ মনে রাখেনি। । মূলত মাদাগাস্কার এবং আফ্রিকার নানা দেশেই নাকি প্রথম এই ফুলটির দেখা মেলে। তাই তো নয়নতারা ফুলকে আজও অনেকেই "Madagascar Periwinkle " নামে ডেকে থাকে। !

*** গাছটি দেখতে কেমন?
॰ এটি গুল্ম জাতীয় গাছ। উচ্চতায় কম-বেশি ১-২ ফুট। যে-কোনও পরিবেশেই এই গাছটি বেড়ে ওঠে। এমনকী, সারা বছর ধরেই ফুল হয়। নয়নতারা ফুলের মূলত তিনটি রং। সাদা, বেগুনি এবং গোলাপি। তবে রং যাই হোক না কেন, প্রতিটি ফুলেরই গুণ কিন্তু এক। আর সবচেয়ে মজার বিষয় হল বুনো, জংলি এই গাছটি অনাদরে, অবহেলাতে থাকলেও সহজে মরে না। বুঝতেই পারছেন, গাছটির পিছনে আপনাকে একটুও ঘাম ঝরাতে হবে না। কিন্ত উপকার পাবেন অতুলনিয়৷

*** নয়নতারা ফুলের নানা উপকারিতা :
॰ বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ফলটিতে মজুত রয়েছে প্রায় ৭০টির মতো Alkaloids, যা একাধিক রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা  পালন করে থাকে।                    এ ছাড়াও এতে রয়েছে অ্যান্টি-ক্যান্সার এবং অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ উপাদান। এই উপাদানগুলি শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। সঙ্গে আরও নানাভাবে শরীরের যত্ন নিয়ে থাকে   যেমন ধরুন......

*** পোকা কামড়ালে সেখানেও নয়নতারা গাছের পাতা লাগালে উপকার মেলে :
॰ এক্ষেত্রে কয়েকটা পাতা নিয়ে ভাল করে বেটে একটা পেস্ট তৈরি করে ফেলতে হবে। এবার সেই পেস্টটা যেখানে পোকা কামড়েছে, সেখানে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিলেই জ্বালা-যন্ত্রণা কমে যাবে।

 ** ডায়াবেটিসের মতো রোগকে দূরে রাখে নয়নতারা    ফুলের পাপড়ি থেকে তৈরি চা :
॰ গত কয়েক বছরে আমাদের দেশে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্তের সংখ্যাটা লাফিয়ে-লাফিয়ে বেড়েছে। এমনকী, বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে আমাদের দেশ বিশ্বের ডায়াবেটিস ক্যাপিটালে পরিণত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার(WHO) রিপোর্ট অনুসারে ভারতের কুড়ি থেকে সত্তর বছর বয়সি নাগরিকদের মধ্যে প্রায় ৮.৭ শতাংশ এই মারণ রোগের শিকার। শুধু তাই নয়, এই সংখ্যাটা যে ক্রমশ বাড়ছে সে কথা মেনে নিয়েছেন চিকিৎসকেরাও। অন্যদিকে Diabetes.co.uk-এর রিপোর্ট অনুসারে আমাদের দেশে কম-বেশি প্রায় ৩০ মিলিয়ান মানুষ এই রোগের শিকার। এমন পরিস্থিতিতে আট থেকে আশি, সবারই যে নয়নতারা ফুলের পাপড়ি থেকে তৈরি চা খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ, এই ফুলে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা ইনসুলির ক্ষরণ যাতে ঠিক মতো হয়, সেদিকে নজর রাখে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না।
***  নিমেষে রক্তক্ষরণও  কমায় :
॰ কোথাও কেটে গেলে সেখানে নয়নতারা ফুলের রস বা ফুলটা  থেঁতো করে যদি মলমের মতো লাগানো যায়, তা হলে রক্তক্ষরণ কমতে সময় লাগে না ৷
 ॰ ক্ষতের চিকিৎসায় নয়নতারা গাছকে কাজে লাগানো যেতে পারে।  কীভাবে ? 
 ০ চার-পাঁচটা নয়নতারা গাছের পাতার  সঙ্গে ২ চামচ হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। এবার সেই পেস্টটা দিনে কয়েকবার  ক্ষতের উপরে লাগালেই হবে!

*** ব্রেনের ক্ষমতা বাড়াতেও অতুলনিয় :
॰ নিয়মিত নয়নতারা ফুলের পাপড়ি থেকে তৈরি চা পানের পাশাপাশি যদি এই গাছের পাতা খাওয়া য়ায়, তা হলে দেহে "ভিনকামাইন"  নামে একটি উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যে কারণে ব্রেনে রক্তের প্রবাহ এতটাই বেড়ে যায়  CognitiveFunction-এর উন্নতি ঘটে। আর মস্তিষ্কের ক্ষমতা যখন বাড়ে, তখন তাল মিলিয়ে বৃদ্ধি পায় স্মৃতিশক্তি। সেই সঙ্গে ব্রেনের কোষ যাতে বয়সের সঙ্গে-সঙ্গে শুকিয়ে না যায়, সেদিকেও নজর রাখে। ফলে ব্রেনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়৷  ফলে অসময়ে স্মৃতিলোপ পাওয়ার মতো ঘটনা ঘটার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনই  ডিমেনশিয়ার মতো রোগও দূরে থাকতে বাধ্য হয়। তাই যাদের পরিবারে এমন রোগের ইতিহাস রয়েছে, তাঁরা যদি নিয়মিত নয়নতারা গাছের  পাতা খেতে পারেন, তা হলে ফল পাবেন একেবারে হাতে-নাতে৷

*** ক্যান্সারের মতো মারণ রোগেও উপকারি :
॰ গত কয়েক বছরে আমাদের দেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ICMR-এর রিপোর্টের দিকে নজর ফেরালেই ছবিটা আরও স্পষ্ট হয়ে যায়।  বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থার তথ্যও একই কথা বলছে। এই সংস্থার এক রিপোর্ট অনুসারে ২০১৮ সালে সারা বিশ্বে প্রায় ৯.৬ মিলিয়ন মানুষ এই রোগের কারণে মারা গিয়েছিলেন, যার মধ্যে প্রায় ৮.১৭ শতাংশেরই বাস আমাদের দেশে। শুধু তাই নয়, ওই একই বছরে আমাদের দেশে প্রায় ১.১৬ মিলিয়ন মানুষ নতুন করে এই মারণ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই হলেন মহিলা। 
বুঝতেই পারছেন, হাতে সময় থাকতে থাকতে যদি সাবধান না হন,তা হলে বিপদ! 
ভাবছেন, সাবধান হবেন কীভাবে? 
প্রতিদিন এই ফুলের পাপড়ি ভিজিয়ে তৈরি চা পান শুরু করুন।  কারণ, নয়নতারা ফুলে  রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ক্যান্সার উপাদান, যা ক্যান্সার কোষেদের মেরে ফলে। ফলে এমন রোগের প্রকোপ কম থাকে৷  
**  মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে :
॰ এই ফুলে  এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা রক্তে মেশামাত্র শরীরের ভিতরে কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে, যে কারণে স্ট্রেস লেভেল কমতে সময় লাগে না। দূরে পালায় মানসিক অবসাদের মতো সমস্যাও।   মানসিক চাপের কারণে কিন্তু নানা ধরনের রোগ
 ঘাড়ে চেপে বসতে পারে। তাই সাবধান হওয়াটা জরুরি।
*** দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায় :
॰ নয়নতারা ফুলে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান চোখের প্রদাহ কমায়। ফলে অসময়ে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার মতো সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনই নানা ধরনের চোখের রোগও দূরে থাকতে বাধ্য হয়।
*** সারা শরীরে রক্তের প্রবাহও বেড়ে যায় :
॰ দেহের প্রতিটা কোণায় যখন অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে যায়, তখন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাও আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে ছোট-বড় কোনও রোগের পক্ষেই ধারেকাছে ঘেঁষা সম্ভব হয় না। এমনকী, কথায়-কথায় ক্লান্ত হয়ে পড়ার মতো সমস্যাও দূরে পালায়।
***  হার্টের ক্ষমতাও  বাড়ায় :
॰ এই ফুলে  উপস্থিত Reserpine নামক একটি উপক্ষার হার্টের যাতে কোনও ধরনের ক্ষতি না হয়, সেদিকে নজর রাখে। এমনকী হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক অথবা স্ট্রোকের মতো রোগের  আশঙ্কাও আর থাকে না।
*** ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখে : 
॰ নয়নতারা গাছের পাঁচ-দশটা পাতা নিয়ে ভাল করে বেটে নিন। তাতে যে রস পাবেন, তা নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে অথবা রাতে শুতে যাওয়ার আগে যদি খেতে পারেন, তা হলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার কোনও আশঙ্কাই থাকবে না। হার্টের ক্ষমতাও বাড়বে।
 *** এই পাতার চা খেলে দাঁতের ব্যথা কমে:
॰  নিয়মিত এই পানীয় দিয়ে মুখ কুলকুচি করলে দাঁতের ব্যথা তো কমেই, দাঁত ও ভালো থাকে৷
॰ নয়নতারা ফুলের পাপড়ি থেকে তৈরি চা খেলে অনিদ্রার সমস্যা দূরে পালাতে সময় লাগে না।

*** নয়নতারা ফুল থেকে চা তৈরির প্রণালী :
০ নয়নতারা ফুলের উপকারিতা অনেক। এক মুঠো নয়নতারা ফুলের পাপড়ি নিয়ে সুর্যের আলোতে শুকিয়ে নিন। এবার তা থেকে এক দুচামচ নিয়ে এক কাপ গরম জলে মিশিয়ে জলটা মিনিটদুয়েক ফুটিয়ে নিন। এবার পানীয়টা  রেখে দেওয়ার পর ছেঁকে নিয়ে তাতে এক চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। প্রতিদিন ব্রেকফাস্টের আগে খালি পেটে যদি এই পানীয় খেতে পারেন, তা হলে দ্রুত উপকার পাবেন।                    
০ পাপড়ির সঙ্গে নয়নতারা গাছের  শুকিয়ে যাওয়া পাতা মিশিয়ে তা থেকে যদি চা তৈরি করা যায়, তা হলে আরও বেশি উপকার পাওয়া যায়৷            এক্ষেত্রে এক কাপ জলে দু'চামচ করে শুকিয়ে যাওয়া     পাতা এবং পাপড়ি মিশিয়ে চা তৈরি করতে হবে।

*** নয়নতার ফুলের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া:
 ॰ এই চা বেশি পরিমাণে বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।  যেমন ....
১| পেট খারাপ হওয়ার আশঙ্কা যায় বেড়ে।
২| যাদের লিভার, কিডনি বা ফুসফুসের সমস্যা রয়েছে, তাদের এই চা খাওয়া উচিত নয়। এমনকী যারা লো ব্লাড প্রেশারের রোগী, তাঁদেরও এই পানীয় এড়িয়ে চলা ভালো৷ 
৩| সবে যারা মা হয়েছেন,বা হবেন তাদেরও এই চা খেতে বারণ করেন বিশেষজ্ঞরা।
৪| সামনে কি কোনও অপারেশন আছে? তা হলে এই চা পান করা চলবে না। এমনকী অপারেশনের পরের কয়েক মাসও এই পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে।
৫| এই চা দিনে চার কাপের বেশি খাওয়া চলবে না। 

০০ নয়নতারা গাছ রোপণ ও পরিচর্যা :
# নয়নতারা গাছ বাড়ির উঠোনে বা ছাদে বা বেল্কনিতে যেকোনো স্থানেই ভালো হয়। বিশেষ কোন পরিচর্যা ছাড়াই নয়নতারা গাছ টিকে থাকে সারা বছর।
# নয়নতারা ফুল গাছ গরম কালের একটি গাছ। গরমের সময় গাছে প্রতিদিনই ফুলে ভরা থাকে। এইজন্য উচিৎ নয়নতারা গরমকালেই প্রতিস্থাপন করা।
০০  টবে নয়নতারা প্রতিস্থাপন করবেন কিভাবে?
# নয়নতারা গাছের জন্য ১০ ইঞ্চির টব নির্বাচন করা উচিৎ।
# আমরা জানি যে টবে গাছ রোপণ করলে টবের মাটির জল নিষ্কাশনের ড্রেনেজ সিস্টেম ভালো থাকতে হয়। নয়নতারার ক্ষেত্রেও একই কথা। 

*** নয়নতারার জন্য মাটি প্রস্তুত কিভাবে করবেন?
# মাটি ৬০%, জৈব বা কম্পোস্ট সার ৩০%  নিয়মে নিলে ভালো হবে।
# মাটির মিশ্রণ তৈরি হলে টবের ফুটো গুলিতে কয়েক  টুকরো ইট ভরাট করতে হবে। সেক্ষেত্রে টবটি উপরে ১ ইঞ্চি খালি রেখে মাটি ভরাট করতে হবে।
# তারপর চারা রোপণ করে জল দিয়ে দিতে হবে। গাছের টবটি ভালো রোদ পাবে এমন স্থানে রাখতে হবে।

** যেকোনো চারা রোপণের ক্ষেত্রে বিকেলে রোপণ করাই ভালো।

০ তথ্য: গুগল ও কল্যানি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রিয় গ্রন্থাগারের আমার প্রিয় বইগুলি
০ছবি: নিজস্ব ,আমার বৌদি বাড়ি
                       ও 
  সাদা 'নয়ন তারার ' ছবি আমার বান্ধবি           সঞ্চিতার.....বাড়ির....
০ কলমে : সন্তু দে

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

জারুল ফুল .....

*** শিউলি ফুল ***

**ছাতিম *সপ্তপর্ণী ****Devilles Tree ** **Blackboard Tree**